থানেতে বাঙালি ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ, নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও
মহারাষ্ট্র পুলিশ এবং বিএসএফের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাদের দাবি, মেহবুব শেখ নামে এক ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, মাইগ্রান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ড এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পরেও এই ঘটনা ঘটেছে।
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার হোসেননগর গ্রামের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী মেহবুব শেখ মহারাষ্ট্রের থানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। গত শনিবার (১৪ জুন) ভোর সাড়ে তিনটায় তাকে বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্রান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “মেহবুবের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর আমরা মহারাষ্ট্র পুলিশের সঙ্গে কথা বলি। তার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের কিছু না জানিয়ে মেহবুবকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।”
মেহবুবের পরিবার জানায়, গত দুই বছর ধরে তিনি থানের মিরা রোড এলাকায় কাজ করছিলেন। গত বুধবার (১১ জুন) তিনি চা খাচ্ছিলেন, তখন মহারাষ্ট্র পুলিশ তাকে বাংলাদেশি অভিবাসী সন্দেহে কানাকিয়া থানায় নিয়ে যায়।
মেহবুবের ছোট ভাই মুজিবুর বলেন, “মেহবুব ফোন করে আমাদের জানায়। আমরা তৎক্ষণাৎ স্থানীয় পুলিশ, পঞ্চায়েত প্রধান এবং মাইগ্রান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শুক্রবারের (১৩ জুন) মধ্যে তার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং পঞ্চায়েতের প্রত্যয়িত বংশতালিকা মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছে পাঠাই।”
মহিষাস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শাব্বির আহমেদ জানান, মেহবুবকে শিলিগুড়ির একটি বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে জানতে পেরে তারা সেখানে যান। কিন্তু কেউ তাদের কথা শোনেনি।
শনিবার ভোরে মেহবুব ফোন করে জানান, তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। মুজিবুর বলেন, “মেহবুব কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তিনি বাংলাদেশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে চাই।”
মহারাষ্ট্র পুলিশের দাবি, মেহবুব নাগরিকত্বের পর্যাপ্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি। মিরা রোড থানার ইন্সপেক্টর মেঘনা বুরাডে বলেন, “আধার বা প্যান কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয় না, কারণ এগুলো জাল হতে পারে। আমরা জন্ম সার্টিফিকেট বা অন্য শক্তিশালী প্রমাণ চেয়েছিলাম, কিন্তু মেহবুব তা দিতে পারেননি।”
ঘটনার সময়রেখা
- ১১ জুন: মেহবুবকে থানে থেকে আটক করা হয়।
- ১২ জুন: পরিবার নথি পাঠায়।
- ১৩ জুন: মেহবুবকে শিলিগুড়ির বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
- ১৪ জুন: ভোরে মেহবুবকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়।