মোবাইল কভার বিক্রেতা রোহিত এখন হবেন ডাক্তার, নীট পরীক্ষায় দুর্দান্ত সাফল্য
ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের সাকচি সানা কমপ্লেক্সের বাইরে ঠেলায় মোবাইল কভার বিক্রি করা রোহিত কুমার নীট পরীক্ষায় দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি নীট ইউজি পরীক্ষায় ৫৪৯ নম্বর পেয়ে সারা ভারতে ১২,৪৮৪তম র্যাঙ্ক অর্জন করেছেন। এই ফলাফলের জোরে রোহিত ঝাড়খণ্ডের সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
রোহিত জানান, তার বাবা আগে সবজি বাজারে কাজ করতেন। রোহিত নিজে দশম শ্রেণির পরীক্ষা প্রাইভেট হিসেবে দিয়েছিলেন। মাসে মাত্র ৮০০ টাকা ফি’র একটি স্কুল থেকে তিনি পাশ করেন। করোনার সময় তিনি একটি মেডিকেল দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন জাগে। এরপর তিনি নীট পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং কঠোর পরিশ্রম করে এই সাফল্য অর্জন করেন।
কঠিন প্রশ্নপত্রেও ভালো ফলাফল
নীট ইউজি পরীক্ষার ফলাফল শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। এবারের প্রশ্নপত্র ছিল বেশ কঠিন, তবুও ছাত্রছাত্রীরা ভালো র্যাঙ্ক পেয়েছে। অ্যালেন কোচিংয়ের বিশেষজ্ঞ পঙ্কজ অগ্রবাল বলেন, “নীটের প্রশ্নপত্র এবার বেশ কঠিন ছিল। তবু ছাত্রছাত্রীরা দারুণ ফল করেছে।” তিনি জানান, এই পরীক্ষায় লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়, কিন্তু আসন আছে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার। আগের বছরগুলোতে ৭২০ নম্বর পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল। কিন্তু এবার ৬০০ নম্বর পেলেই র্যাঙ্ক ১২০০-এর কাছাকাছি হয়েছে। ফিজিক্স ও বায়োলজির প্রশ্ন এবার খুব কঠিন ছিল।
আকাশ কোচিংয়ের বিশেষজ্ঞ দিনেশ সরাওয়াগি বলেন, “গত বছর অনেকে ৭২০-এ ৭২০ পেয়েছিল। ৬৮ জনের র্যাঙ্ক ওয়ান হয়েছিল, যদিও সুপ্রিম কোর্টে মামলার পর ২৮ জনের র্যাঙ্ক ওয়ান হয়। এবার আমরা আশা করেছিলাম প্রশ্নপত্র কঠিন হবে, এবং তাই হয়েছে। প্রশ্নপত্রের মান ছিল ২০১৯-এর মতো। তাই আমরা ছাত্রছাত্রীদের সেইভাবে প্রস্তুত করেছি। বায়োলজিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর আসে, তারপর কেমিস্ট্রি এবং ফিজিক্স।”
কোয়ালিফাইং কাট-অফ কমেছে
মোশন এডুকেশনের বিশেষজ্ঞ নিতিন বিজয় জানান, নীট ইউজি-২০২৫ ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি। প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় সব ক্যাটাগরির কোয়ালিফাইং কাট-অফ কমেছে। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া মহেশ কেসওয়ানি ৭২০-এ ৬৮৬ পেয়েছেন। জেনারেল ও ইডব্লিউএস ক্যাটাগরির কাট-অফ ১৪৪, আর ওবিসি, এসটি ও এসসি ক্যাটাগরির জন্য ১১৩। গত বছরের তুলনায় জেনারেল ও ইডব্লিউএস ক্যাটাগরির কাট-অফ ১৮ নম্বর কমেছে, আর ওবিসি, এসসি ও এসটি ক্যাটাগরির কাট-অফ ১৪ নম্বর কমেছে।
রোহিতের এই সাফল্য অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। কঠোর পরিশ্রম আর স্বপ্নের জোরে তিনি প্রমাণ করেছেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।